পৃথিবীতে যে কয়টি রোগের নাম শুনলে মানুষ আঁতকে ওঠে, ক্যান্সার তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৯.৫ কোটি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রতি বছর আক্রান্ত হয় ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ এবং এর মধ্যে ৮৮ লক্ষ মানুষ মারা যায় এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে। বর্তমান এই ধারা অব্যাহত থাকলে মাত্র ১০ বছরের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ২ কোটির ও বেশি। এই পরিসংখ্যান থেকেই বুঝা যায় বর্তমান সময়ে ক্যান্সারের ভয়াবহতা কতটা ব্যাপক।
Contents
বাংলাদেশে এর অবস্থাঃ
ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই বাসকরে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশেগুলোতে। বাংলাদেশের মত অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্রতা, যথোপযুক্ত শিক্ষার অভাব, রোগ ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব আরো বাড়িয়ে তোলে। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর আনুমানিক সংখ্যা ১৫ লক্ষের উপর। প্রতি বছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় দুই লক্ষ রোগী। এদের মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ রোগী মারা যাচ্ছে প্রতি বছর। ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশে ক্যান্সারের মৃত্যুহার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পুরুষের থেকে মহিলা মারা গেছে বেশি। বাংলাদেশে পুরুষদের মধ্যে খাদ্যনালীর ক্যান্সার ২০.৭%,ফুসফুসের ক্যান্সার ১৪.২%,মুখ গহ্বর ক্যান্সার ৮.৩%পাকস্থলী ক্যান্সার ৭.২%, সুরতন্ত্রের ক্যান্সার ৪.৩% এবং অন্যান্য ক্যন্সারে আক্রান্ত হয়েছে ৪৫.৩%, । মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার ১৯%, জরায়ুমুখের ক্যান্সার ১২%,খাদ্যনালী ক্যান্সার ১১.১%, পিত্তথলী ক্যান্সার ৭.৮%,মুখ গহ্বর ক্যান্সার.৬.৭%, ফুসফুসের ক্যান্সার ৪.৭%, , ডিম্বকোষের ক্যান্সার ৪.৬% এবং অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে ৩৪.১%।
BBC Report: বাংলাদেশেও কেন মেয়েদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে?
ফুসফুসের ক্যান্সার কাদের হওয়ার সম্ভবনা বেশি ?
ধুমপায়ী পুরুষরা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে থাকে। ফুসফুসের ক্যান্সারের শতকরা ৮০ ভাগেরই কারন ধুমপান। এছাড়াও আরো নানাবিধ কারনে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে। নিজে ধুমপান না করেও দীর্ঘ দিন ধুমপায়ীদের মধ্যে অবস্থান করলেও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এসবেটস নিয়ে যারা কাজ করেন তাদেরও ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত হবার সম্ভবনা বিদ্যমান।
জরায়ু ক্যান্সার কাদের হওয়ার সম্ভবনা বেশি ?
যৌনকর্মে সক্রিয় যেকোনো নারী যেকোনো সমইয়ে জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। বিশ বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে করা আর ত্রিশ উর্ধ্ব বয়সে সন্তান ধারণ জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। যেসব যৌনাংগে আঁচিল আছে, যারা ধূমপান করে অথবা যারা এইচ,আই,ভি সংক্রমিত তাদের এ রোগ হবার সম্ভবনা বেশি। যে নারীর একাধিক যৌনসঙ্গী আছে তার এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা সর্বাধিক।
ব্রেষ্ট ক্যান্সার কাদের বেশি হয়ঃ
ব্রেষ্ট ক্যান্সার যে কারো হতে পারে, তবে পুরুষের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রেই এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়।যেকোন বয়সের নারীদেরই এ ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। তবে ঝুঁকির মাত্রা ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রেই বেশি। স্তন ক্যান্সারে যতজন আক্রান্ত হন তাদের ৮০ ভাগেরই বয়স হচ্ছে ৫০ এর উপরে। সেই সাথে যাদের পরিবারে কারোর স্তন ক্যান্সার রয়েছে তাদেরও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। এছাড়াও ধুমপান, মদ, পান, বেশি চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া, অস্বাভাবিক মোটা হলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
ক্যান্সারের ব্যাপারে চিকিৎসার উপর, নাকি প্রতিরোধের উপর বেশি জোর দেয়া উচিত?
ক্যান্সার আক্রান্ত হিয়ে চিকিৎসার চেয়ে এর প্রতিরোধের উপর আমাদের বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিত।ক্যান্সার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্য্যবহুল তাই এর প্রতিরোধই সবার জন্য মঙ্গলজনক।
আরো পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ এর ঔষুধ সেবনে সতর্ক থাকুন Hypertension
কিভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব?
গবেষনায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কিছু ব্যাপার মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো হয়। যেমনঃ
১। ব্যায়ামঃ এজন্যে প্রতিদিন ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে শারীরিক পরিশ্রম করা। প্রত্যেকদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা যেমন- দৌড়ানো,সাইকেল চালানো,হাঁটা।
২। খাদ্যভ্যাসঃ ক্যান্সার প্রতিরোধের নানা ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তামাকের ব্যবহার পরিহার করা। প্রতিদিন অধিক পরিমাপ শাক সবজি ও ফলমূল খাওয়া। চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া। মদ্যপানের অভ্যাস পরিহার করা। নিজেকে সচল রাখা।
৩। সচেতনতাঃ ক্যান্সার নির্ণয় বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণে তৎপর থাকা। মহিলাদের বিশেষ করে কম বয়সে প্রথম সন্তান ধারণ পরিহার করতে হবে। বেশি করে ফাইবার যুক্ত খাবার খেতে হবে। বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন মেখে বের হওয়া। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো। সেটা সম্ভব না হলে শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করানো।সর্বোপরি একটি সুন্দর মার্জিত জীবনচারণ ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় সহায়ক।
Pretty good
thank you
Nice
thanks
Cancer is a serious disease