Current Date:September 24, 2023
ডায়াবেটিস

Control Diabetes Mellitus : ডায়াবেটিস কি এবং কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখবেন

Contents

ডায়াবেটিস কি ও কেন ?

যে সমস্ত রোগে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত ডায়াবেটিস হল তার মধ্যে একটি।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬০ মিলিয়ন এর ও বেশি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ এর মধ্যে ডায়াবেটিস রোগী বেশি। International Diabetes Federation (IDF) এর মতে বাংলাদেশে ১0 মিলিয়ন লোক ডায়াবেটিস রোগ এবং সমান সংখ্যক অলক্ষিত , আনুমানিক ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দিগুন হয়ে যাবে।

বহুমূত্র রোগ, মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলায়টাস (ইংরেজি: Diabetes mellitus) একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।

ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস এর টাইপ

টাইপ-১

টাইপ-১ বহুমূত্র হল অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়।

শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। ১০-৩০ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। ইহা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হল HLADR 3 এবং HLADR 4 নামক দুটি জিন ।

টাইপ-২

টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স’। টাইপ-২ রোগীদের শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তাকে ব্যবহার করতে পারে না। ব্যায়াম ও খাদ্যবিধির সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়। তবে অনেক সময় প্রয়োজন হয় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন।

৪০ বছর বা তারপরে এ ধরনের বহুমূত্র রোগ দেখা দেয়। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়।খাবারে চর্বির ধরনও গুরুত্বপূর্ণ;স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড ঝুঁকি বাড়ায় পক্ষান্তরে পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ঝুঁকি কমায়।

অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণ বিশ্বজুড়ে ২৪৬ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ শতাংশের বেশি হল টাইপ-২ ডায়াবেটিস। দুই ধরনের ডায়াবেটিসই গুরুতর এবং হতে পারে শিশু ও তরুণদেরও। এ জন্য ডায়াবেটিসের বিপদ-চিহ্নগুলো জানা খুবই জরুরি।

Types of diabetes mellitus

লক্ষন (Symptoms)

ঘন ঘন প্রস্রাব। এ কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ
অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া
অতিশয় দুর্বলতা
সার্বক্ষণিক ক্ষুধা
স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস
চোখে ঝাপসা দেখা
ঘন ঘন সংক্রমণ।

রোগ নির্ণয় (Diagnosis)

মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি।

কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ খাবারের আগে ৭ মিলি.মোল/লি, আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

প্রতিরোধ (Prevention)

টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা অজানা।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস যা বিশ্বব্যাপী সমস্ত ক্ষেত্রে ৮৫-৯০% এর জন্য দায়ী । ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, শরীরের স্বাভাবিক ওজন বজায় রেখে প্রতিরোধ বা বিলম্ব করা যেতে পারে। প্রতিদিন ৯০ মিনিটের বেশি ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিসের ঝুকি 28% কমিয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে রক্তে শর্করার পরিমান স্বাভাবিক রাখা।

এটি সাধারনত খাদ্য তালিকা পরিবর্তন, ব্যায়াম, ওজন কমানো এবং যথাযত ঔষধের ব্যাবহার দারা সম্পন্ন হতে পারে।

আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ান (American College of Physicians) এর মতে চিকিৎসার লক্ষ্য হল গ্লাইকোসাইলেটেড হেমোগ্লবিন ( HbA1c) ৭-৮% রাখা।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা (Treatment)

ডায়াবেটিস পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না, শুধু মাত্র নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডায়াবেটিস এ ব্যবহৃত ঔষধ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

মেটফরমিন সাধারনত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রথম সারির চিকিৎসা হিসেবে সুপারিশ করা হয়। কারন এটি মৃত্যুর হার হ্রাস করে। এটি লিভারে গুকোজ উৎপাদন হ্রাস করার মাধ্যমে কাজ করে

টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর আরো ঔষধ যা মুখে দারা দেয়া হয় এর মধ্যেঃ-

ইনসুলিন নিস্বরন বৃদ্ধি করে (sulfonylureas)

অন্ত্র থেকে শকর্রা হ্রাস করে (acarbose)

প্রসাবে গ্লুকোজ নিস্বরন বৃদ্ধি করে (SGLT2 inhibitors)

ডাইপেপটাইডিল পেপটিডেজ-4 ইনহিবিটর্স (DPP-4) এনজাইমকে বাধা গ্রস্ত করে (sitagliptin).

ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিসের জটিলতা (Complication)

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা বা অন্ধত্ব( ৩০% এর মত)

মাথা ঘোরা ( ৩০% এর মত)

টাইপস অব এন্টিডায়াবেটিক ড্রাগঃ

সাধারন ডায়াবেটিক ঔষধের মধ্যে রয়েছেঃ

নন সালফোনাইলিউরিয়াস (non-sulfonylureas): (যেমন Metformin)
আলফা-গ্লুকোসিডেজ ইনহিবিটর্স (alpha-glucosidase inhibitors): (যেমন acarbose, miglitol)
ডাইপেপটাইডিল পেপটিডেজ-4 ইনহিবিটর্স (dipeptidyl peptidase 4 inhibitors) (যেমন alogliptan, linagliptin, saxagliptin, sitagliptin)ইনসুলিন
মেগ্লিটিনাইডস (meglitinides) : (যেমন nateglinide, repaglinide)
সোডিয়াম-গ্লুকোজ ট্রান্সপোর্টার 2 (SGLT2) ইনহিবিটর্স (SGLT-2 inhibitors): (যেমন canagliflozin, dapagliflozin, empagliflozin)
সালফোনাইলিউরিয়াস (sulfonylureas) (যেমন chlorpropamide, glimepiride, glipizide, glyburide, tolazamide, tolbutamide)
থিয়াজোলিডিনেডিওন (thiazolidinediones): (যেমন rosiglitazone, pioglitazone).

ডায়াবেটিস নিয়ে ভুল ধারনা

ডায়াবেটিস রোগীরা মনে করে সব ধরনের মিষ্টি খাওয়া নিষেধ, প্রকৃত পক্ষে শুধু মাত্র গ্লুকোজ (চিনি) খাওয়া যাবে না। কিন্তু ফ্রুক্টোজ (মিষ্টি ফলে থাকে) এটা খাওয়া যাবে।

যা যা খাবেনঃ

উপকারী চর্বি যেমন, বাদাম, অলিভ ওয়েল, মাছের তেল ইত্যাদি।

শাক সবজি ও ফলমূল– মূলত পরিষ্কার, টাটকা ও রঙিন শাকসবজি ভাল। জুসের থেকে ফল বেশি খেতে হবে।

দেশজ মাছ ও মুরগি।

ভাল প্রোটিন জাতীয় খাবার– যেমন, ডিম, অল্প চর্বি জাতীয় দুধ, টক দই ইত্যাদি।

সব ধরনের ফল

গ্রীন টি

যে খাবার এড়িয়ে চলতে হবেঃ 

১. মিষ্টি জাতিয় খাবার

২. ডুবোতেলে ভাজা খাবার

৩. অতিরিক্ত তেলে রান্না করা খাবার

৪. চর্বি জাতিয় খাবার; যেমন- ডালডা, ঘি ইত্যাদি

৫. গরু, খাসী, হাঁস ও পাখির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।

৬.সাদা পাউরুটি, চিনিযুক্ত সেরিয়াল, প্রক্রিয়াজাত পাস্তা বা চাল বর্জন করতে হবে।

৭.চিনি, গুড়, মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার এবং সফট ড্রিংক এড়িয়ে চলতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিসের আরো খাবার

ব্যায়াম বা শরীরচর্চা:

ডায়াবেটিস ঔষুধের থেকে বেশি জরুরি প্রত্যেহ ব্যায়াম এবং ডায়েট।

সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন শরীরচর্চা করতে হবে। যেমন- হাঁটা, সাঁতার কাটা, ব্যায়াম করা, সাইকেল চালানো, দড়ি লাফানো, খেলাধুলা করা ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ সুষম খাদ্য কি এবং কেনো খাবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *