Contents
স্ট্রোক
আপনি কি ধূমপান করেন? ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় আছেন? তা হলে সাবধান থাকুন। কারণ, এগুলি স্ট্রোক বা ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
স্ট্রোক কাকে বলে?
সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্যে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে, এমনকি মস্তিষ্কের কোষেও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কোনও কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ সংকীর্ণ হয়ে বা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেনর সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যাওয়ার ফলে যে অবস্থা দ্রুত জন্ম নেয় তাকে বলা হয় স্ট্রোক।
স্ট্রোক হওয়ার কারণঃ
রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি যাদের থাকে তাদের স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
• ব্রেইনে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণ উচ্চ রক্তচাপ। ব্লাড প্রেশার থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
• স্ট্রেস ও ডিপ্রেশনের কারনে স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
• যারা সারাদিন বসে বসে কাজ করে, হাঁটা চলা বা শারিরিক শ্রম নেই বললেই চলে তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের থেকে অনেক বেশি হয়।
স্ট্রোক দুই ধরনেরঃ
এটা দুই ধরনের হয়, একটা রক্তক্ষরণ জনিত বা হেমোরেজিক স্ট্রোক এবং আরেকটি হলো স্কিমিক স্ট্রোক, এতে রক্তক্ষরণ হয় না।
১। ইসকেমিক (Ischemic) স্ট্রোক (রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া)
২। হেমোরেজিক (Hemorrhagic) স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া)
স্ট্রোকের লক্ষন কি কিঃ
মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ বা রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া,এই দুই অবস্থায় কে স্ট্রোক বলে। রোগীদের দুই অবস্থাতেই প্রায় একই ধরনের উপসর্গ বা (symptoms & signs) দেখা দেয়। তবে রোগীর অবস্থা কতটা খারাপ তা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন এলাকায় রক্ত চলাচলে ব্যাঘাট ঘটে তার উপর, কতোটা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হল এবং কতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল, তার উপর নির্ভর করে।
সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা যায়ঃ
- মাথা ঘুরাই, হাটতে অসুবিধা হওয়া, ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা করে।
- কথা বলতে সমস্যা হয়।
- অবশ, দুর্বলতা লাগা, শরীরের এক পাশ বা দুই পাশ অকেজো হয়ে যায়।
- চোখে ঘোলা দেখে, অন্ধকার অন্ধকার লাগে, ডাবল দেখে।
- হঠাৎ খুব মাথা ব্যথা করে।
স্ট্রোক রোগ নির্নয়ের কারনঃ
মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ জনিত স্ট্রোক একটি ভয়ানক সমস্যা, জরুরি অবস্থা (Critical condition) যদি মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঘটে, তবে তা দ্রুত রোগীর মৃত্যু ঘটায়। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ (uncontrolled High Blood Pressure), ডায়াবেটিস (Diabetes),মাথায় তীব্র আঘাত (severe Head injury) এছাড়াও জন্মগত কারণ, যেমন ধমনীর দেয়ালের দুর্বল অংশ ফেটে যাওয়া (Ruptured Aneurysm), ধমণী-শিরার ভেতর অস্বাভাবিক সংমিশ্রণ, ইত্যাদি থেকে রক্ত ক্ষরণ ঘটায়। রোগ ভালো করার জন্য দ্রুত ব্যাবস্থা খুবই জরুরী। কারন মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের পর কোষগুলো ফুলে উঠতে শুরু করে তাই মস্তিষ্ক দ্রুত জটিলতার শিকার হয়। যার ফলে রোগী দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ধমণী বা শিরাবাহিত জমাট বাধা রক্তপিন্ড মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা দেয় আর জন্ম নেয় স্ট্রোক, রক্ত চলাচল শূন্য অকার্যকর মস্তিষ্ক বা সেরেব্রাল ইনফার্কশন (Cerebral Infarction)। এ ক্ষেত্রেও রোগ নির্ণয় দ্রুত জরুরি।
স্ট্রোক হয়েছে কিনা সেটা বোঝার উপায়:
- শারীরিক পরিমাপ: ব্লাড প্রেসার পরিমান, রক্তে কোলস্টেরল পরিমান, ডায়াবেটিস পরিমান, আমায়িনো এসিড পরিমান
- আল্ট্রাসাউন্ড : ঘাড়ের আর্টারির আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যে কোথাও রক্তনালী সরু কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে কিনা
- আর্টরীয়গ্রাফি : রক্তনালীতে এক ধরনের রং দিয়ে x-ray করে দেখা, এতে রক্ত চলাচলের একটা ছবিও পাওয়া যায়
- CT scan: মস্তিস্কের 3D স্ক্যান করা দেখা,
- MRI: MRI করে দেখা হয় যে মস্তিষ্কটিস্যুর কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা,
- ইকো কার্ডইওগ্রাফি: ইকো কার্ডইওগ্রাফিতে আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে হৃদপিন্ডের একটা ফটো তুলে দেখা হয় কোনো জমাট রক্ত, বুদ বুদ কিংবা অন্যকিছু রক্ত চলা চল বন্ধ করছে কিনা।
আরো পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ এর ঔষুধ সেবনে সতর্ক থাকুন Hypertension
স্ট্রোকের ঝুকি কমানোর উপায়ঃ
স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ব্যবস্থা বজায় রাখলে অনেকখানি ঝুকি কমানো যায় :
- ব্লাড প্রেসার মেপে দেখা এবং কন্ট্রোল করা
- ধুমপান থেকে বিরত থাকা
- কোলেসটেরল এবং চর্বি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকা
- নিয়ম করে খাবার খাওয়া
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
- নিয়মিত হাটা বা হালকা দৌড়ানো
- দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা
- মাদক না নেয়া বা মদ্য পান না করা
মাইল্ড স্ট্রোকঃ
একে বলা হয় ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক বা (TIA)। কিন্তু এটি আসলে TIA বা মাইল্ড স্ট্রোক।
কিভাবে বোঝা যাবে মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে?
প্রাথমিকভাবে যদি দেখা যায় কোন সুস্থ মানুষের হঠাৎ হাঁটাচলায় ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়, অথবা মাথা ঘুরে পড়ে যায়, অথবা যদি দেখা যায় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরের কোন অংশ হঠাৎ অবশ হয়ে গেছে,তাহলে বুঝতে হবে তার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে।এছাড়া হয়ত দেখা যাবে কেউ হঠাৎ হাত বা পা নাড়াতে পারছে না, কিংবা মুখটা এক পাশে বাঁকা হয়ে গেছে
করনীয় কিঃ
লক্ষণগুলো দেখা মাত্র দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। এরপর CT-Scan বা MRI করে দেখতে হবে যে এটা কি স্কেমিক স্ট্রোক না্কি হেমোরেজিক স্ট্রোক।
এক্ষেত্রে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় খুব জরুরী। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, রোগীর সুস্থ হবার সুযোগ তত বেশি থাকবে।
কিভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানো যাবে?
এগুলো গেলো, আক্রান্ত হবার পরের কথা। এখন আসি কিভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানো যাবে?
যেকোনো ব্যক্তি যদি চর্বি জাতীয় খাবার ও ধূমপান এড়িয়ে চলে, হাইপার টেনশন থাকলে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, তবে অনেকটাই মাইল্ড স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানো যাবে ।
এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুনঃ মাইল্ড স্ট্রোক সম্পর্কে যা জানা জরুরি
Marattok rog
ha
awesome
thanks